24 Aug 2019 | শাহীন চৌধুরী | দৈনিক আমাদের সময়
---------------------------
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা দ্রুত বাড়ায় উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ কারণে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি মাঝারি আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিও দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশে জ্বালানি সংকট থাকায় অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রই এখন আমদানি করা কয়লা দিয়ে নির্মাণ করা হবে। আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বরগুনায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২০২২ সালে শুরুতেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৭০ একর জমিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জমি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার কিছু জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইজারা নেয়া হয়। ওই সরকারি জমিতে বসবাসকারী ১৩৯টি পরিবারের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ, জমি কেনা, বাঁধ নির্মাণ, মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ একযোগে শুরু হয়, যা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশানবাড়িয়া গ্রামটিই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্রস্থল। অবশ্য প্রকল্পটি ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে পরিচালিত হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বা ৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ২৫ বছর এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা (প্রতি টন কয়লার দর ১২০ ডলার হিসেবে)। তবে কয়লার দাম কম থাকলে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে।
আইসোটেক সূত্র জানায়, তাদের পার্টনার ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। তারা ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তারা বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। আর এ কেন্দ্রগুলো চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে যাবে।
আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মঈনুল আলম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া এ অঞ্চলের জনগণের কথা চিন্তা করে প্রকল্প এলাকায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্প সফল আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে আইসোটেক।