---------------------
বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ছবি: বাংলানিউজ |
বেসরকারি খাতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। তবে ব্যতিক্রম বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১২ এপ্রিলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। অল্পদিনের মধ্যেই ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রটির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রোফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড বলছে, ২০২২ সালের শুরু থেকেই উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড’।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কয়েকবছর আগে ২০১২ সালে ওরিয়ন গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন করে পিডিবি। তবে এগুলোর কোনোটাই এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
সেখানে পুরোপুরি ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে আইসোটেকের ক্ষেত্রে। তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই উৎপাদনে যাওয়া লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত সার্টিফিকেট পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ, জমি ক্রয়, বাঁধ নির্মাণ, মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব কাজ শেষে দেওয়া হবে স্থাপনা নির্মাণের ছাড়পত্র। বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশানবাড়ীয়া গ্রামে বেশ জোরেশোরেই চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ।
প্রকল্পটি ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে পরিচালিত হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা (৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
চুক্তি অনুযায়ী, সরকারকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা (প্রতিটন কয়লার দর ১২০ ডলার হিসেবে)। কয়লার দাম কম থাকলে সেই অনুযায়ী বিদ্যুতের দামও কমে যাবে।
আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মঈনুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্টটির নির্মাণ কাজ ৪৫ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যক্ষভাবে সহযেগিতা করে যাচ্ছে। এজন্য আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণও সাহায্য করছে। সবার সহযোগিতা না পেলে এত বড় কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি, সবার সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।
বাংলানিউজকে মঈনুল আলম জানান, আমাদের পার্টনার ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। তারা ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তারা বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া এ অঞ্চলের জনগণের কথা চিন্তা করে প্রকল্প এলাকায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। যেহেতু এলাকার পানি লবণাক্ত তাই গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয়দের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করা হবে।
সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়েছে।
বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন। আর এ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে যাবে। এছাড়া ৫ হাজার ৯২ মেগাওয়াটের ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।