বরগুনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি দখলের অভিযোগ

08 Jul 2018 | আবু জাফর সালেহ । দৈনিক সমকাল
------------------------------

বরগুনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি দখলের অভিযোগ
বরগুনার তালতলীতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানা জমির পাশাপাশি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জাল দলিল করা, ভূমিহীনদের নামে দেওয়া বন্দোবস্তকৃত কৃষি খাসজমিসহ সরকারি সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। এমন অভিযোগে হাইকোর্টে রিট আবেদনও করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানি আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন লিমিটেড ও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ স্থানীয়দের। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশানবাড়িয়া মৌজার খোট্টার চর এলাকায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় শুরু করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন লিমিটেড ও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করার কথা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। এ লক্ষ্যে নির্মাণাধীন এলাকায় অন্তত ২০০ একর জমি ক্রয় করার কথা রয়েছে। তবে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানা জমির পাশাপাশি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জাল দলিল করা, ভূমিহীনদের নামে দেওয়া বন্দোবস্তকৃত কৃষি খাসজমিসহ সরকারি সম্পত্তি নামে-বেনামে দখলের অভিযোগ উঠেছে। এসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে কোম্পানি দুটি। 
এদিকে, এসব অভিযোগে ভূমি সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বরগুনা জেলা প্রশাসক, তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২৮ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছেন তালতলী এলাকার মো. আলী আজিম ফরাজী। রিটের আলোকে গত ২৯ মে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও জাফর আহম্মেদের বেঞ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর আদেশ দেন।  
রিট আবেদনকারী আলী আজিম ফরাজী বলেন, ১৯৫৯-৬০ সালের বন্দোবস্ত কেস দেখিয়ে ভুয়া পর্চা তৈরির মাধ্যমে অবৈধভাবে দলিল করে নিয়েছে কোম্পানি দুটি। যার মধ্যে জেএল নং ৪১-এর ১১৬৯ খতিয়ানে মো. আ. রশিদ হাওলাদার নামে তিন একর, ১১৭৫ খতিয়ানে মোসা. রাজিমা বেগম নামে তিন একর, ১১৬৬ খতিয়ানে  মো. আয়নুদ্দিন নামে তিন একর, ১১৬০ খতিয়ানে মো. আবুল কালাম নামে তিন একরসহ একাধিক জাল বন্দোবস্ত কেস রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্মাণাধীন কোম্পানি সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে জমি দখল করে যাচ্ছে।  
এ ব্যাপারে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান জানান, ৫ জুলাই আদেশের কপি হাতে পাওয়া গেছে এবং সে অনুযায়ী আদালতে মতামত প্রদানের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 
এ বিষয়ে খোট্টার চর এলাকার মো. সুলতান শিকদার বলেন, আমি মমাচিন নামের এক রাখাইনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে বছরের পর বছর ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু কোম্পানির লোকজন স্থানীয় সেলিম, মুসা তৈয়ব, জাহাঙ্গীর, সোহরাব জোমাদ্দারসহ একাধিক দালালের মাধ্যমে একই দাতার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে আমার জমি দলিল করে নিয়েছে। 
সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে প্রথমে দালাল চক্রটি সাংবাদিক ও জমিদাতাদের ওপর ক্ষিপ্ত হলেও একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার নামের এক দালাল স্বীকার করে বলেন, তিনি কোম্পানির কাজ করে দিচ্ছেন, কাজ শেষে কোম্পানি তাকে একটা সুবিধা দেবে। আর যাদের জমি এখনও কাগজপত্রের কারণে ক্রয় করা সম্ভব হয়নি, তা-ও পর্যায়ক্রমে করা হবে।  
এ বিষয়ে গত ২৫ জুন তালতলী উপজেলা পরিষদের সামনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল আলম বলেন, কিছু অনিয়মের অভিযোগ তিনি শুনেছেন, তবে অন্যায়ভাবে কারও জমি এ কোম্পানি নেবে না। নিয়মনীতি অনুসরণ করেই এ এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তবে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে কিছুই বলতে রাজি হননি তিনি। 
এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছুই জানায়নি কোম্পানির লোকজন।