27 Sep 2018 | Jagonews24.com
------------------
প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলায় ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ২০২২ সালের শুরু থেকেই উৎপাদনে যাবে কয়লাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।
৩০০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরকারকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা (প্রতিটন কয়লার দর ১২০ ডলার হিসেবে)। তবে কয়লার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৪ টাকা। সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই প্রকল্পে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৪৬তম বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং এটি আগামী বছর থেকে উৎপাদনে যেতে পারবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
বৈঠকে সূত্র জানায়, গত দুই বছরে বেসরকারি বেশ কয়েকটি কোম্পানি সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের চুক্তি করলেও অনেক কোম্পানির কাজের গতি সন্তোষজনক নয়। এজন্য এসব কোম্পানির কাজের গতি বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
তবে বরগুনার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের গতি সন্তোষজনক। উৎপাদন শুরুর পর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ন্যূনতম ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ বিভাগের বিকল্প কাউন্সিলর অফিসার স্বাক্ষরিত সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৭ সালে কয়লা আমদানি করে প্লান্ট চালানোর জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটির অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। আর বরগুনা জেলায় কয়লাভিত্তিক ৩৫০ মেগাওয়াট ২২ শতাংশ।
বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রকল্পটি চলতি বছরের ১২ এপ্রিলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত (পার্চেস এগ্রিমেন্ট ও ইমপ্লিমেন্টেশন) চুক্তি করে। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড’।
জানা যায়, মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা (৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। মোট ৩০০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এই প্লান্ট থেকে চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা (প্রতিটন কয়লার দর ১২০ ডলার হিসেবে)। তবে কয়লার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৪টাকা।
নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দূরত্ব টেংরাগীরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল (ফাতরার চর) থেকে ন্যূনতম ৬.৩৮ কিলোমিটার এবং সুন্দরবন থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে দুই কিলোমিটার এবং সুন্দরবন (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ইতোমধ্যে বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র পেয়েছে আইসোটেক।
এছাড়া নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় সরকারি কোনো খাস জমি নেই মর্মে ভূমি অফিস থেকে এবং প্রকল্প এলাকায় বন বিভাগেরও কোনো জমি নেই বলে বনবিভাগ ছাড়পত্র দিয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের অবস্থানগত সার্টিফিকেট পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ, জমি ক্রয়, বাঁধ নির্মাণ, মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব কাজ শেষে দেয়া হবে স্থাপনা নির্মাণের ছাড়পত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুল আলম বৃহস্পতিবার টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ একটি প্রধান উপাদান। উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এজন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। তাই আমারও এ ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তবে পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেটাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর সেখানকার এলাকাবাসীর জন্য পুনবার্সন চলছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বৈদেশিক অর্থায়নে নির্মিত হওয়ায় সেহেতু নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটিতে জানানো হয়, প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী অধিবাসীদের পুনবার্সন করার জন্য সাড়ে ৩ একর জমি কেনা হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়নের বোর্ডের জমিতে ১০৪টি পরিবার বসবাস করে। সেই ১০৪ জনের প্রত্যেককে ৫ শতক করে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচয়ে বলা হয়- ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। তারা অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এসব দেশে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ওই এলাকায় শুধু বিদ্যুৎ প্লান্ট নয়, সেখানে কর্মরতদের ও স্থানীয়দের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল হবে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সাড়ে ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করা হবে।
বৈঠক কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলামে এমপির সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ও সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি এবং এম এ লতিফ এমপি বৈঠকে অংশ নেন।