বাঁশখালী হত্যাকাণ্ড: দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি

29 May 2021 | রাহুল শর্মা | The NewsBangla24.com 
----------------------------------------- 

নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। ছবি : নিউজবাংলা

৬৩ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতিতে ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে বাঁশখালীতে নিহতদের পক্ষে মামলা; বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল ও বিনিয়োগকারী কোম্পানির অব্যবস্থাপনা ও বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা এবং হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা রয়েছে। 

বাঁশখালীতে হত্যা, হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ৬৩ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে বাঁশখালীর জনগণের জীবন-জীবিকা, সম্পদ ও পরিবেশের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ছয়টি দাবিও জানান তারা। 

দাবির মধ্যে রয়েছে প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ আহমেদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল; ১৭ এপ্রিল গুলিবর্ষণের জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচার; বাঁশখালীতে নিহতদের পক্ষে মামলা; বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল ও বিনিয়োগকারী কোম্পানির অব্যবস্থাপনা ও বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা এবং হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। 

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বাঁশখালীতে গুলিবর্ষণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি ওঠার পরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার বরং ভুক্তভোগীসহ সবার কথা বলার অধিকার নানাভাবে খর্ব করেছে। 

সর্বশেষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় পুলিশ গণ্ডামারা থেকে প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর ফলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কেউ ভবিষ্যতে কথা বলার সাহস পাবে না। 

ফেসবুক পোস্টে শাহনেওয়াজ আহমেদ প্রকল্পের বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং যুবসমাজকে লেখনীর মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে। 

এতে বলা হয়েছে, এ ঘটনাকে কোনোভাবেই আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা মনে হওয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। 

বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। 

তারা বলেন, ‘গত ৪ মে হাইকোর্ট নিহতদের প্রত্যেককে আপাতত পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক, শ্রমিকদের পরিবার ও এলাকাবাসীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেয়ার এবং তাদের কোনো প্রকার হয়রানি না করার আদেশ দেয়। এই মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ সরাসরি লঙ্ঘন করা হয়েছে।’ 

এ ঘটনার পর নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে গ্রামবাসী-শ্রমিকদের নিহত-আহত হওয়ার ঘটনায় কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত ও কার্যকরী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং ৩ হাজার ৫৬২ জন নিরস্ত্র শ্রমিক ও এলাকাবাসীকে আসামি করে প্রকল্প উদ্যোক্তা ও পুলিশ মামলা করেছে, যা অব্যাহত হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করছে।’ 

বিবৃতিতে সই করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সদস্যসচিব বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ফারাহ কবীর, নারী অধিকারকর্মী শিরীন পারভীন হকসহ আরও অনেকে।