পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে চীনা নাগরিক নিহত

দৈনিক বণিকবার্তা । ২০ জুন ২০১৯
--------------------- 
বয়লার থেকে পড়ে বাংলাদেশী শ্রমিক সাবিন্দ্র দাসের (৩২) মৃত্যু হয় মঙ্গলবার বিকালে। চীনা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সাবিন্দ্র দাসকে বয়লারের ওপর থেকে ফেলে দেয়ার। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন রাতে সংঘর্ষে জড়ান পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাংলাদেশী ও চীনা শ্রমিকরা। এতে গুরুতর আহত ঝাং ইয়াং ফাং নামে এক চীনা নাগরিক গতকাল মারা যান। ঝাং ইয়াং ফাং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন। 
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের এ ঘটনা তদন্তে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) ও ইপিসি পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করেছে। গতকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 
জানা গেছে, পায়রা কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কাজ করছেন প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি। এর মধ্যে চীনা নাগরিক রয়েছেন দুই হাজার। মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে সাবিন্দ্র দাস নামে এক বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। মঙ্গলবার বিকালে বয়লার থেকে পড়ে মারা যান প্রকল্পের শ্রমিক হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের সাবিন্দ্র দাস। এ ঘটনায় স্থানীয়রা চীনাদের দোষারোপ করলে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে কয়েকশ বাংলাদেশী ও চীনা শ্রমিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে ঝাং ইয়াং ফাং মাথায় গুরুতর আঘাত পান। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত আরো পাঁচ চীনা নাগরিক ও দুই বাংলাদেশীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, কলাপাড়া থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সেখানে কর্মরত ছয়জন চীনা নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশী শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঝাং ইয়াং ফাংয়ের মৃত্যু হয়েছে। বাকি পাঁচজন চীনা নাগরিককে গতকাল সকালে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। 
এ ঘটনায় বিসিপিসিএল, ইপিসি ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাই। আহত চীনা ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের উদ্ধার করে পটুয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক চীনা নাগরিক মারা যান। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, সচিব, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে যৌথ সভা করা হয়েছে। 
সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম গতকাল বিকালে বলেন, কলাপাড়ার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিউ সি ইলেকট্রিশিয়ান ঝাং ইয়াং ফাংয়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিতে চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 
বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রাণহানির ঘটনায় হেলিকপ্টারে গতকাল সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেন। 
পটুয়াখালী জেলার পায়রার আন্ধারমানিক নদীর তীরে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে বিসিপিসিএল। বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) একটি যৌথ কোম্পানি এটি। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি ও জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মিতব্য ২০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ২০১৭ সালের শেষ দিকে নির্মাণকাজ শুরু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে পায়রা কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। আগামী আগস্টের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো কয়লাভিত্তিক বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। 
মিরসরাইয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় রোববার রাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের এক কর্মীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে চায়না হারবারের অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন আসামি রয়েছে। 
ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের কর্মী নিহত নান্নু মিয়ার স্ত্রী সুলতানা মাফিয়া মনিরা বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে চায়না হারবারের শত্রুতার বলি হয়েছেন তিনি। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। 
জোরারগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের পক্ষ থেকে নান্নু হোসেন মিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।