প্রস্তাবিত জ্বালানি পরিকল্পনা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক

১৯ মে ২০২৩ । বাংলাদেশ 
---------------------------------- 
নীতি গবেষণাপত্র (বাংলাইংরেজি


বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিবিরোধী ‘সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা’ (Integrated Energy and Power Master Plan - IEPMP) বাতিলের দাবি জানিয়েছে উপকূলীয় পরিবেশ ও জীবনযাত্রা কর্মজোট (ক্লিন), বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)। ক্লিন ও বিডাব্লিউজিইডি’র যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এক নীতি গবেষণাপত্রে এ দাবি জানানো হয়। 

নীতি গবেষণাপত্রে জানানো হয় , জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ও ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনোমিক্স জাপান (আইইইজে) এ পরিকল্পনা প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ রাখেনি। কিছু নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুটি পরামর্শ সভা আয়োজন করা হলেও মূল প্রতিবেদনে নাগরিক মতামতের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এ পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সংসদ সদস্য, এমনকি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি। 

নীতি গবেষণপত্রে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ, ২০৪১ সালে ৪০ শতাংশ ও ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বিগত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ২০৪১ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ, আইইপিএমপিতে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০.৭ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি (বিশেষত কয়লা ও এলএনজি), ৩২.৮ শতাংশ তথাকথিত ‘উন্নততর প্রযুক্তি’ (বিশেষত তরল হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া ও কার্বন সংরক্ষণ প্রযুক্তি) এবং মাত্র ১৭.১ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে যা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

এলএনজি আমদানিতে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। কয়লা আমদানিতেও বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। গবেষণাপত্রে বলা হয় যে, জাপানের প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ ক্রমশ ক্যাপাসিটি চার্জ এবং বৈদেশিক জ্বালানি ও প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। অপরদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। 

গবেষণায় আরো বলা হয় , জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রতি বছর গড়ে ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে গড়ে ১০ শতাংশ হারে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেল থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৬.৬১ টাকা, ফার্নেস অয়েল থেকে ১৬.৮৬ টাকা, কয়লা থেকে ১৩.৪০ টাকা এবং সৌরশক্তি থেকে ১৩.৩০ টাকা। 

গবেষণাপত্রে সরকারের কাছে প্রস্তাবিত আইইপিএমপি বাতিল করে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও জাতীয় মালিকানার ভিত্তিতে নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়।