রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি বাতিলের দাবি

2 July 2021 | The Bangla Tribune 
----------------------------------------- 


ভারতীয় কয়লা আমদানি ও রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। শুক্রবার (২ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি করেন। 

বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবীর, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) এর আহ্বায়ক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব. হাসান মেহেদী। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে কলকাতা বন্দরে ৩ হাজার ৮০০ টন কয়লা খালাস করা হয়েছে যা জাহাজের মাধ্যমে মংলা বন্দরে পাঠানো হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য এই কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদে আরও জানানো হয়েছে যে, পুরোদমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতি মাসে কলকাতা থেকে ২০ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা হবে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির চুক্তির কোনও খবর ভারত বা বাংলাদেশের সরকার জানায়নি বা কোনও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এ প্রকল্পের শুরু থেকেই বিশ্ব-জনমত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও পরিবেশগত ঝুঁকি উপেক্ষা করে ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অসামরিক সম্পদ ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদনে এ ধরনের গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতা গণতান্ত্রিক নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী এবং নাগরিকদের জানার অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামান্তর।

তারা বলেন, ভারতীয় কয়লা পৃথিবীর সবথেকে নিম্নমানের কয়লার অন্যতম। প্রতি কেজি অস্ট্রেলীয় বা ইন্দোনেশীয় কয়লায় যেখানে ৭০ গ্রাম ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয় সেখানে ভারতীয় কয়লায় ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয় ৩০০ গ্রাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারতীয় কয়লা দরকার ৭০০ গ্রাম, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা দরকার ৪৫০ গ্রাম ও ইন্দোনেশিয়ার ৫০০ গ্রাম। যে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য ভারত নিজেই অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করে থাকে। ভারতীয় কয়লা ব্যবহার করলে একদিকে ৪০ শতাংশ বেশি কয়লা দরকার হবে অন্যদিকে প্রায় ৫ গুণ বেশি ফ্লাইঅ্যাশের দূষণ বাড়বে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত থেকে কয়লা আনার ক্ষেত্রে রায়মঙ্গল-চালনা-মোংলা রুট ব্যবহার করা হবে যা সুন্দরবনের ভিতরের বলেশ্বর, শিবসা, শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, কালিন্দী, পানগুছি ও রায়মঙ্গল নদী ব্যবহার করা হবে। প্রতিমাসে ভারত থেকে ৩০টি ও আকরাম পয়েন্ট থেকে ৮০টি কয়লাবাহী জাহাজ এসব নদী দিয়ে চলাচল করবে। গত ১০ বছরে সুন্দরবনের শ্যালা, পশুর, কুঙ্গা ও ভৈরব নদীতে গত ১০ বছরে ১১টি এবং ভারতের অংশে ৯টি কার্গো ফ্লাইঅ্যাশের ডুবে যায় যার মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার টন ফ্লাইঅ্যাশ, ৫ হাজার টন কয়লা, ৩৭০ টন জ্বালানি তেল, ৫০০ টন পটাশিয়াম, ১ হাজার ৩৬ টন জিপসাম ও ৭০০ টন গম সুন্দরবনের নদী ও বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। 

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে এর দূষণের সঙ্গে কয়লা পরিবহণের দূষণ যুক্ত হয়ে সুন্দরবনের পানি, মাটি, গাছপালা ও প্রাণিসম্পদের যে ক্ষতি হবে তাতে বিশ্ব ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক ঢাল ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। 

সমাজের এই বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও ভারত থেকে কয়লা আমদানির অন্যায্য, অস্বচ্ছ ও গোপন উদ্যোগ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান।